সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলালের~ এক মাসের কবিতা ~ নভেম্বর ২০২৩

Poem of a month by Saifullah Mahmud Dulal ~ November 2023





মা

আমাদের কত কত সমস্যা, সীমাদ্ধতা।
আহরে...
আমরা আমাদের মাকেও মনের মতো করে ভালোবাসতে পারি না।
মা মরে যেতে যেতে হাতের হাহাকার বাড়িয়ে
ভেজা চোখের তীব্রতায় তাকিয়ে থাকেন ইনফিনিটি!
যেনো আমরা খুবই ক্ষুধার্ত, তৃষ্ণার্ত
তাই তিনি শেষ বারের মতো জড়িয়ে নিয়ে বুকের দুধ দিতে চাচ্ছেন,
পারছেন না!
মৃত্যু বহু বার ওয়ারেন্ট নিয়ে আমাদেরকে ধরতে এসেছিলো
মায়ের চোখ রাঙানি দেখে চলে গেছে মৃত্যুপুলিশ।
ক্যাস্টর অয়েল, কর্পূর বা বাদামে নিজ হাতে বানানো কাজল দিয়ে
সেই যে কপালের কোনায় এঁকে ছিলেন আশীর্বাদের টিপ,
এখনো রক্ষা করে আমাকে!
এখন তাঁর হাতের ছাপ নেই,
মেঝে লেপার দাগের মতো মুছে গেছে হস্তরেখা
আঙুলের কড়া যেনো কর্পূর; টিপসই আসেনা
আমার মা আর হাসে না!
আমার ভেতরে মা জেগে থাকেন আর আমি ঘুমিয়ে থাকি মায়ের বুকের ভেতর।
এখন সকাল না সন্ধ্যে
মা জানেন না আজ রোববার নাকি নভেম্বর নাকি আশ্বিন!
মনে করতে পারেন না ছোট ছেলের নাম!
ক্ষয়ে ক্ষয়ে যাচ্ছেন মা!
মা এখন জীবন্ত পাথর। প্রার্থনার শক্তি নেই
তিনি বিশ্বাস করেন- পরকাল; পরকালের আট বেহেস্ত
আমার বিশ্বাস… মা নিজেই একটি স্বর্গ,
মা বহুমাত্রিক সৌরভ।
আমরা বেড়ে উঠি সেই অদ্ভূত সৌরভে সৌরভে।
মা মানব মানচিত্র।
মায়ের মুখে এখন মৃতভাষা আর জীবতভাষার যুদ্ধ চলছে,
তবু সাড়ে তিন হাজার ভাষায় মাকে ডাকি
আমার মা বাকশূন্য, দৃষ্টিশূন্য, শক্তিশূন্য; স্মৃতিশূন্য, চিন্তাশূন্য
শুধু শূন্যতা আর শূন্যতা নিয়ে ফ্যালফ্যাল তাকিয়ে থাকেন!
মায়ের আঁচল,
মায়ের হাত অনন্তকালের পরশ পাথর
আমাকে স্পর্শ করলেই আমি জীবন্ত হয়ে উঠি
আমি মায়ের পান্ডুলিপি হয়ে উঠি।
জন্মের সমস্ত শান্তি মায়ের চাল ধোয়া ভেজা হাতে
আমাদের কত কত সমস্যা, সীমাদ্ধতা
আমরা আমাদের মাকে আরো বেশি ভালোবাসতে পারি না কেনো!
তৃপ্তিহীন ভালোবাসা কেনো এতো সীমিত!
মায়ের নামের ওয়ারেন্ট আমরা কেনো ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ঘুড়ি খেলতে পারিনা!
আমাদের নয়নে অদৃশ্য নায়গ্রা
আংশিক আমার চোখের জল+আংশিক মায়ের চোখের জল
আমাদের চার চোখে এক কান্না, একই ক্রন্দন
যেন সেই মাতৃগর্ভঘরে দু'জন এক নাড়িতে বাঁধা!
—-
টরন্টো, ৩০ নভেম্বর ২০২৩



শাদা ফুল কালো জোছনা


শাদা পোশাক, সন্দেহভাজন।
তবু শাদাফুল সুবাস ছড়াবে।
কালো মুখোশ, গুপ্ত তৎপরতা।
তবু কালো জোছনা ফুটবে।
কয়েকটি চিল, কোথাও মৃত্যুগন্ধ।
তবু কারো হৃদয় জাগবে।
হঠাৎ গুলি। থেমে নেই চুমু..
বোরখা খুলে নগ্ন হবে নারী।
—-
টরন্টো, ২৮ নভেম্বর ২০২৩।




ইনফিনিটি এবং



তোমার পুরুষবন্ধুর সাথে…
অনেকটা আধুলির মতো আংশিক, অসমাপ্ত..

আমরা যখন নদীর ঘাটে নৌকা থেকে…
পাখির ঠোঁটে শীত, শীসকাল…
সদ্য বিদায়ী হেমন্ত শুধু জীবননান্দ দাশের…

পহেলা নভেম্বর বুধবার যেনো…
গান আর ঘুমের ভেতর…
খাট আর চৌকির পার্থক্য হচ্ছে…

তুমি আর কতটা ছড়িয়ে দিবে আগুনের…
শুন্য স্থান পুরণ….
শুধু বাতাসে অক্সিজেনের মতো. ..
নাইট্রোজেন একদিন আলাদা…

তোমার পুরুষবন্ধু+আমার নারীবন্ধু তারা এবং..
মৃত্যুর পর আমরা…
দুই বিছানায় অথবা এক খাটে…
অনেকটা আংশিক, পাখির শিসকালে..
ঘাটে নৌকায়..
সাইয়িদ আতিকুল্লাহর বুধবার রাতে…
টরন্টো, ২৩-২৫ নভেম্বর ২০২৩




৫০৬ স্ট্রিটকার



তোমাকে পাওয়া মানে পৃথিবীর বাইরে (ব্ল্যাকহোলে) যাওয়া,
দূরত্বের ওপাড়ে।
ঈশ্বরের সমান্তরাল তুমি,
তোমরা উভয়ের এক প্রকার কিংবা দুই প্রকার রূপকথা
তবে তুমি মাঝেমধ্যে মৃত, মাঝেমধ্যে বিবাহিত,
তোমাকে মাঝেমধ্যেই ডিম ভাজতে হয়।
.
মেইন ট্রিস্ট থেকে ৫০৬ স্ট্রিটকার
শুধু তোমার বাড়িতেই যায়!
আমার জাহাজ, উড়ো জাহাজ, প্রাইভেট ট্রেনট্রাম কিছুই নেই।
আমাদের নিজস্ব একটি ডাকঘরও নেই,
ভবিষ্যৎ নেই, অথবা আছে।
.
চার শ’ সাইত্রিশ কোটি নিরানব্বই লাখ, তিরানব্বই হাজার তিন শ’ চৌদ্দ
সামুদ্রিক নটিক্যাল মেইল অথবা
ফোর-ও-ওয়ান হাই ওয়েতে
৮০-৯০ থেকে ১০০, ১৫০ স্পিড দিয়েও তোমার বাড়ি যাওয়া যায় না,
সাত আসমানেও না।
ঈশ্বর অদৃশ্য। ভবিষ্যতও তাই।
.
তোমার ডিম ভাজার ঘ্রাণগন্ধসুবাস ছড়িয়ে পড়ছে
প্রতিবেশি ভাষায়।
—-
টরন্টো, ২২ নভেম্বর ২০২৩




তিনবিত্ত

খাট-পালংক থাকা সত্ত্বেও পছন্দ গৃহ পরিচালকের চৌকি
উচ্চবিত্ত।
খাটের কথা চিন্তা করে মাঝ পথে গতি থামিয়ে দেয়াই
মধ্যবিত্ত।
চকি নাই। মেজেই মানবজীবন, মাটিতেই চাষবাসের নাম
নিন্মবিত্ত।





বিলুপ্ত হিব্রু হয়ে যাচ্ছো

তুমি কমে যাচ্ছো,
কমে কমে হ্রাস হয়ে যাচ্ছো!
দাস হচ্ছো, কৃতদাস।
থেমে যাচ্ছো,
নেমে যাচ্ছো জলসিঁড়ির সর্ব শেষ ধাপে
স্নায়ূযুদ্ধের চাপে,
পাসপোর্ট সাইজ হয়ে যাচ্ছো
তুমি দুপুর থেকে দুই টুকরো বিকেল হয়ে যাচ্ছো।
কমতে কমতে
জমতে জমতে
মিশে যাচ্ছো মৌন বরফে।
নিচে নামতে নামতে ন্যূনতম এবং নিন্মবিত্ত হয়ে যাচ্ছো,
সংখ্যালঘু হয়ে যাচ্ছো।
যোগ-পুরনের বদলে ভাগ-বিয়োগ হয়ে যাচ্ছো
আমাদের ছোট নদীর হাঁটু জল হয়ে যাচ্ছো
নদীর তলদেশে নৌকার মতো।
আই.কম, বি.কম হয়ে যাচ্ছো।
বনসাই হয়ে যাচ্ছো।
আকাশ থেকে মাটিতে, মেঘ থেকে বৃষ্টি হয়ে ঝরছো
ঘন সর হয়ে যাচ্ছো, লিকুইড।
পাউটারের গুঁড় দুধ হয়ে যাচ্ছো।
ক্ষুদ্র এবং সংক্ষিপ্ত হয়ে যাচ্ছো; কর্পুর হয়ে যাচ্ছো
সরলরেখা থেকে বিন্দু হয়ে যাচ্ছো
বিলুপ্ত ভাষার মতো হিব্রু হয়ে যাচ্ছো
হরপ্পা হয়ে যাচ্ছো
স্বপ্ন হয়ে যাচ্ছো।
ক্রমশ হয়ে যাচ্ছো
ক্ষুদ্র জাতিসত্তা বিরল নৃ-গোষ্ঠী হয়ে যাচ্ছো।
অমানুষ হয়ে যাচ্ছো।
—-------
টরন্টো, ১৯ নভেম্বর ২০২৩




সাদাছড়ি বৈঠক

‘কি সুন্দর অন্ধ!‘
সে সৌন্দর্য দেখেনি,
রোদ বা জোছনা তার কাছে সমান, অন্ধকার।
রঙ বা রক্ত সম্পর্কে ধারণা নেই, সবই অদৃশ্য ঈশ্বর।
মা
মেয়ে
গন্ধম গাছ
দেখেছিলো জন্মান্ধের হাতচোখে।
নিজেকেই দেখা হলো না; আয়নার কি দোষ?
বিবাহিত শীত, ঋতুবতী বর্ষা এবং আগুনের বোন গ্রীষ্ম
রেইল পদ্ধতি ছাড়াই তিন কাল টের পায়;
বাকী তিন ঋতু বোধের বাইরে।
জন্মান্ধ হাফেজের মতো মুখস্ত সমস্ত জীবন, মুখস্ত মৃত্যু
অথচঌ অদেখা-অচেনা অক্ষর।
হোমারের সাথে ব্রেক ফার্স্ট
লুই ব্রেলের সাথে লাঞ্চ
এবং ডিনার with হেলেন কিলার, NOIR রেস্টুরেন্টে।
মানবাধিকার
জীবনাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবন্ধির অভিযোগ কার কাছে দেবে?
অন্ধ বান্ধব কুকুরের কাছে!
___________
টরন্টো, ১৮, নভেম্বর ২০২৩



রেডিও এবং জাদুর বাক্স

তখন ১৯ শ’ ইন্টারমিডিট
আমরা তখন আকাশ বাণী শুনতাম,
আকাশ মেঘলা থাকলে লাইসেন্সকৃত রেডিওটা ঘড় ঘড় করতো,
থাপ্পর খেলেই আবার কথা বলতো।
আর বাবার থাপ্পর খেলে আমার কথা বন্ধ হয়ে যেতো।
.
বাবার দ্বিতীয় বিয়েতে সবাই সবাই ভীষণ ভীষণ বিরক্ত
আমরা, পাড়া-প্রতিবেশি এবং গ্রামবাসী।
কিন্তু যৌতুকের শাদাকালো বউবাক্স
কদর বাড়িয়ে দিলো-
এখন সব্বাই ছুটে আসে নতুন বৌ আর নতুন জাদুর বাক্স দেখতে।
.
ভাঙা রেডিওটা আমার মা,
আর নতুন জাদুর বাক্সটা যেনো আমাদের সৎমা।
__________________________
টরন্টো, ১১ নভেম্বর ২০২৩



ঘড়িও পরাধীন

রাত-দিনের দূরত্বে সূর্যাস্ত এবং সূর্যোদয়
দাম্পত্য টানাপোড়েনের মতো আরো দূরত্ব বেড়ে যায়
কখনো কমে আসে, শীত-গ্রীষ্মে।
[পিছিয়ে যাচ্ছি আমি, এগিয়ে যাচ্ছো তুমি।]
.
সময় স্বাধীন। নিয়ন্ত্রণহীন। ৮৬৪০০ সেকেন্ড।
তবু নিয়ন্ত্রিত হয় ঘড়ি;
নিয়ন্ত্রিত হয় ঘড়ির তিন কাঁটা। জিরো আওয়া।
[দিবালোকের সাশ্রয়- ডে লাইট সেভিং।] মানুষ ঈশ্বর হয়ে উঠে!
.
যখন ঘড়ির কাঁটায় এক ঘন্টা হেরফের হচ্ছে
সময় জোনের সন্ধিক্ষণ।
পিটার হেনলেইনের সাথে তখন বার্লিনের কফি শপে কথা হচ্ছিলো-
সালভাদর দালির 'দ্য পারসিসটেন্স অব মেমোরি' এবং
আসাদ চৌধুরীর 'ওদের হাতে ঘড়িতো নেই সূর্য ওদের ঘড়ি' নিয়ে।
সূর্যঘড়ি
তারাঘড়ি
জলঘড়ি
মোমঘড়ি
বালুঘড়ি
বৈদ্যুতিক ঘড়ি
হাতঘড়ি
এবং অন্যান্য আলোচনা!
.
‘ক্লক্কা’ থেকে ক্লকের উৎপত্তি
জ্যোতির্বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা- ঘড়ির কাঁটা সামনে দিকে
ডানদিকেই ঘুরে। ঘুরবে।
[তোমরা জোর করে বাধ্যতামূলক পেছনের দিকে বামে নিয়ে যাও!]
_________
টরন্টো, ১১ নভেম্বর ২০২৩





পাপ যাকে স্পর্শ করে নি


পাপ যাকে স্পর্শ করে নি,
সে স্বর্গীয় দেবদূতের মতো নেমে এসেছে অতিথির মতো
লাভা এবং লাবন্য ছড়িয়ে
ফলঋতুর টুকটুকে মেপল লিফের চেয়েও
তিনি তিনগুণ রোমান্টিক রঙে বর্ণিল!


পাপ যাকে স্পর্শ করে নি,
ভার্জিন ভোর। যেন অসূর্যস্পর্শী। এখন তাকে স্পর্শ করবে শীত।
শীত জেনে নেবে তার তাপমাত্রা; ভেতরে ছড়িয়ে দিবে উষ্ণতা।
স্পর্শিত পরশ পাথরের মতো,
প্রিয় প্রজাপতি বা লাজুক লজ্জাবতীর মতো
তাকে স্পর্শ করবে চোরাস্রোত; ফ্রিজিং রেইন,
তাকে ছুঁয়ে দিবে ঐশি থেকে আগত নিস্পাপ তুষার কনা।


পাপ যাকে স্পর্শ করে নি,
সে হয়তো পুস্প, নয়তো মৃত্যু
বা অদৃশ্য বাতাস।
আহ, মায়ার স্বর্ণলতা ছড়িয়ে আছে মোহন মৃত্যু।
আর আমাদের পুণ্যের পাতা শুন্য, শুধু শুন্যতা।
______________________________________
টরন্টো, ৯ নভেম্বর ২০২৩




পিঁপড়াজীবন

খাগড়াছড়ির রঙমিঞা বিক্রি করে পিঁপড়ার ডিম
ভবিষ্যত থেকে, বংশবিস্তার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ভারসাম্য
হিব্রু ভাষায় পিপীলিকারা কাঁদে।
.
বংশপরম্পরায় সংঘবদ্ধ, সুশৃঙ্খল, পরিশ্রমী।
তবু তারা অসহায় মানুষের কাছে
রানী পিঁপড়া পলিজিনিকে বন্দনা করে সমবেত কান্নায়।
.
রানীর সাথে যৌনান্দের পরম তৃপ্তির পর পরই
পিতা-পিঁপড়া ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন
মীথের মতো, রূপকথার মত পিঁপড়াজীবন।
.
'পিপীলিকা’ উপন্যাস পড়তে পড়তে
পিঁপড়াদের অভিনীত A Bug’s Life দেখতে দেখতে
ক্ষোভ এবং ক্ষমা সমান্তরাল!
.
আমাদের মা হুইল চেয়ারে আটকা ছিলো আট বছর,
তাঁর পুঙ্গত্বের সুযোগে পিপঁড়ারা খেয়েছে তাকে!
তাই মাকে পাঠাতে চেয়েছি- অ্যান্টার্কটিকায়।
.
রঙমিয়াদের হাত থেকে রক্ষার জন্য
এখন পিঁপড়া তোমরাই চলে যাও অ্যান্টার্কটিকায়।
সেখানে পিপীলিকা নেই, রঙমিঞা নেই।
________________
টরন্টো, ৮ নভেম্বর ২০২৩




সুবোধ সরকার

[২১° উত্তর ৭৮° পূর্ব এবং ৩২,৮৭,২৬৩ কিমি]
হিন্দুস্থান নও। তুমি নিজেই একটি ভারতবর্ষ,
তবু দূতাবাসের মতো ছড়ানো শাখায় তুমি আন্তর্জাতিক।
জুতা পা ছাড়া হাঁটে না; সব রাস্তা রোমে যায় না।
তোমার ভেতরের আগুনে তুমি তরল দুধের বলকে উঠো,
ঘনত্বে জমে থাকো শান্ত সর।
তোমার প্রেম আর প্রতিবাদ সমান্তরাল, ক্ষুধা ও খাদ্য সমান্তরাল
অগ্নি পরীক্ষায় দুধ-গণিতে কত দিয়েছিলো কৃষ্ণনগর?
পশ্চিমবঙ্গ থেকে দশ দিগন্তে ছড়িয়ে যাও আনন্দ, বর্ণমালা
বেলুনের মতো উড়ে দূরে যায়, দেশান্তরী মেঘ..
বৃষ্টির লাটাই সুতা তোমার হাতে।
তোমার হাতের কলম কি পি সি সরকারের জাদুর কাঠি?
সব সরকারের মেয়াদ ফুরিয়ে যায়, তুমি চিরস্থায়ী সরকার
প্রতিটি প্রদেশ তোমার এক একটি কাব্যগ্রন্থ
প্রতিটি কবিতায় ফুটে থাকে চণ্ডীগড়, অন্ধ্রপ্রদেশ, জম্মু ও কাশ্মীর...
এরা যেনো তোমার যমজ বোন।
সিন্ধু সভ্যতা থেকে তুমি উঠে এসেছো হিমালয়ে-
এবং এখনো তোমার কবিতা থেকে মানুষের সারেগামায়
জেগে উঠে ভারতীয় সূর্য,
তোমার ভেতরে মল্লিকার মতো রাত্রি যাপন করে চাঁদ ও চন্দ্রিমা।
-------------
টরন্টো, ৪ নভেম্বর ২০২৩





ইসরাইলি কবিতা


ইসরাইল যে ভাবে,
সে ভাবে তুমিও আমাকে ক্ষতাক্ত রক্তাক্ত করছো,
আমার আত্মা এবং শরীর ছিন্নভিন্ন প্যালেস্টাইন!
গ্রামের খারাপ মানুষেরা যে ভাবে,
সে ভাবে আমাকেও গরু-ফাডা করে স্বস্থিতে তুমি অসুস্থ।
বাগান এখন ফিলিস্তিনির বিরান ভূমি।
রেল কলোনির বস্তিবাসীরা যে ভাষায়,
সে রকম এক হিব্রু ভাষায় আমার মৃত আত্মাকে গালি দিয়েছো,
অমার্জনীয় অপরাধ তোমার সন্তান তোমাকে ক্ষমা করবে না।
গাজার অভিশপ্ত মানুষেরা যে ভাবে, সে ভাবে
আমার এবং প্যালেইস্টানের সন্মান-স্বীকৃতির প্রশ্ন তুলেছো।
তোমার পাপ একদিন সাপ হয়ে তোমাকে ছোঁবল দিবে।
__________
টরন্টো, ৫ নভেম্বর ২০২৩।




জবাফুলের জিহ্বা

আবারো একটা খুনপর্ব শেষ করে হ্যালোইন রাতে
স্বস্তিপূর্ণ চা খাই। শীতল রক্তচা।
হত্যাকাণ্ডের মধ্যে একটা অদ্ভুত গন্ধ থাকে,
অপরাধমূলক আনন্দে নিজের সাথে নিজেই একটু হাসি,
ধন্যবাদ দিই।
.
এখন অজু করে তাহাজ্জুত পড়বো।
গ্লোভস ছিলো, তবু হাতে রক্তের দাগ!
.
লাশ নগ্ন করে আমিই সাজিয়েছি কাফনে,
সে দায়িত্বটাও আমারই ছিলো,
পালন করেছি। শুধু ভুলে গিয়েছিলাম খুনের দোয়া!
সেই ভুল থেকেই কি বেরিয়ে এলো রক্তের দাগ?
.
খুনের কবিতা থেকে বেরিয়ে আসছিলো জবাফুলের জিহ্বা
বিশ্বস্ত ছুরি ছাড়া আর কোনো সাক্ষী নেই,
সিসি ক্যামেরার চোখ ফাঁকি দিয়ে ছায়াও খুলে রেখেছিলাম।
ফিরে এসে দেখি ক্যালেন্ডারে কোত্থাও নেই--
পহেলা নভেম্বর।
নভেম্বর থেকে নিখোঁজ একটি তারিখ।
এই খুন কে করেছে- গাম আউ
________________
টরন্টো, ০১ নভেম্বর ২০২৩

Post a Comment

1 Comments

  1. আমারো তুমি আছো
    তোমারো আমি
    তোমাতেই আমি
    তোমাকেই নমি ।
    আমার নবতিপর মা এখন রান্না করতে পারেন না। কিন্তু আমার মুখে লেগে আছে মায়ের হাতের রান্নার স্বাদ। সামান্য উপকরণ দিয়ে বানানো অনুপম রান্নার সৌরভ।
    আপনার কবিতায় আমি মাকে পাই।এই ব্রাহ্ম মুহূর্তে মা আমার পাশে শুয়ে আছেন।আর আমার চোখ আটকে আছে কয়েকটি অমোঘ লাইনে। "আমরা আমাদের মাকে আরো ভালোবাসতে পারি না কেনো!"
    "মায়ের নামে ওয়ারেন্ট আমরা কেনো ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ঘুড়ি খেলতে পারি না।"
    আমাদের চার চোখে এক কান্না…যেন মাতৃগর্ভঘরে দু'জন এক নাড়িতে বাঁধা।"
    আবার একইসঙ্গে চমক লাগে যখন পড়ি, "তোমার ডিম ভাজার ঘ্রাণ গন্ধ সুবাস ছড়িয়ে পড়ছে প্রতিবেশি ভাষায়।" তখন আমার চোখে লাগে ঘোর। এখানে পাওয়া চোদ্দটি কবিতা যেন চতুর্দশপদী রেলগাড়ি।—যযাতি দেবল, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত

    ReplyDelete